3- বিয়ে ভাঙা বা আটকে রাখার যাদু



যাদের বিয়ে হচ্ছে না এবং মনে করছেন যে কেউ আপনাদের ক্ষতি করার জন্য যাদু/বান/তাবিজ করেছে, তারা একটু এদিকে আসেন। এই পোস্টটা ভাল করে পড়ুন।
------------------
[ক]
কাউকে বিয়ে ভাঙা বা আটকে রাখার জন্য বান মারলে / তাবিজ করলে / যাদু করলে সাধারণত এমন দেখা যায় প্রস্তাব আসে, সবকিছু পারফেক্ট থাকলেও পছন্দ হয়না। সব ঠিকঠাক থাকার পরও হয়তো ছেলে বেঁকে বসে, নয়তো মেয়ে। কোনোনা কোনোভাবে বিয়ে ভেঙে যায়। মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক গুণধর হওয়া সত্ত্বেও কোনো প্রস্তাব আসে না। কেউ প্রস্তাব দিলে পছন্দ হওয়ার বদলে উল্টা খারাপ লাগতে লাগে। 
আমার এক রিলেটিভের এই সমস্যা ছিল, ওর বিয়ের আলোচনা উঠলেই সপ্তাহ-খানেকের জন্য অসুস্থ হয়ে যেত! এপিক!!
এই যাদুতে আক্রান্ত হলে সচরাচর কিছু লক্ষণ দেখা যায়-
১. মাথা ব্যথা। ঔষধ খেয়েও তেমন ফায়দা হয়না।
২. প্রায়সময়ই মানসিক অশান্তিতে থাকা, থাকা। মাঝেমধ্যেই বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত খুব অস্বস্তিতে ভুগা।
৩. ঘুমের মধ্যে শান্তি না পাওয়া, ঠিকমত ঘুমোতে না পারা, আবার ঘুম থেকে উঠার পর অনেকক্ষণ কষ্ট হওয়া।
৪. মাঝেমধ্যেই পেট ব্যথা করা।
৫. ব্যাকপেইন। বিশেষত: মেরুদণ্ডের নিচের দিকে ব্যথা করা। 
.
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, অনেকের ওপর বিয়ের আটকে রাখার জন্য যাদু করতে জ্বিনের সাহায্য নেয়া হয়। এজন্য কারো-কারো এই যাদু সংক্রান্ত সমস্যার সাথে সাথে জ্বিন রিলেটেড সমস্যাগুলোও দেখা যায়। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই শয়তানী যাদুর প্রচলন আমাদের দেশে খুব বেশি। আল্লাহ হিফাজত করুন। 
আমরা প্রথমে লাইভ রুকইয়ার পদ্ধতি আলোচনা করে, তারপর সেলফ রুকইয়ার নিয়ম আলোচনা করবো। আপনি যদি নিজেই নিজের জন্য রুকইয়া করতে চান, তাহলে সোজা [গ] অনুচ্ছেদে চলে যান!
.
[খ]
বিয়ে সমস্যার জন্য সেলফ রুকইয়া:
১. বিয়ে সমস্যার জন্য নিজে নিজে রুকইয়া করতে চাইলে প্রথমে মানসিক প্রস্তুতি নিন। এটা পাক্কা ইরাদা করে নিন সমস্যার একটা বিহিত করেই ক্ষান্ত হবো। নিজে নিজে রুকইয়া করলে অনেককে কয়েকদিন পরেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে দেখা যায়। এজন্য রুকইয়া করার ক’দিন মানসিক সাপোর্ট দেয়ার মত একজন থাকলে খুব ভালো হয়।
২. খুব ভালোভাবে পাক-পবিত্র হয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়ুন, সবচেয়ে উত্তম হল তাহাজ্জুদের সময়। নইলে অন্য যেকোনো জায়েজ ওয়াক্তে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ুন। এরপর দু’হাত তুলে আল্লাহর কাছে আপনার সমস্যা থেকে 'পরিত্রাণের' জন্য এবং সুস্থতার জন্য দু'আ করে ইস্তিগফার দরুদ শরিফ পড়ে ট্রিটমেন্ট শুরু করুন। হাতের কাছে এক বোতল পানি নিয়ে বসুন। প্রথমদিন শাইখ সুদাইস বা শাইখ লুহাইদানের রুকইয়া কয়েকবার শুনে নিশ্চিত হয়ে নিন। সমস্যা থাকলে অবশ্যই বুঝতে পারবেন, যেমন: অনেক ঘুম ধরবে, মাথাব্যথা করতে পারে, তলপেটে ব্যথা করতে পারে, হাতপা ব্যথা করতে পারে, শরীরের ভেতর ছটফট করতে পারে, অকারণে কান্না আসতে পারে। এছাড়াও রুকইয়া শুনতে গিয়ে বমি বমি লাগতে পারে, বমি হয়ে গেলে ভালো, হয়তোবা সাথে যাদুর জিনিশ বের হয়ে যাবে। সাধারণত যাদের রুকইয়া শুনে বমি হয়ে যায়, তাঁরা সহজেই সুস্থ হয়ে যান।
৩. রুকইয়া শোনার পর পানির বোতলটি নিন, নিয়ে "সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২, ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯" এই আয়াতগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিন, এরপর সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস তিনবার করে পড়ে ফুঁ দিন। কিছু পানি এখনি খেয়ে নিন, বাকিটা রেখে দিন। এবং নিচের প্রেসক্রিপশন ফলো করুন।
.
[গ]
প্রেসক্রিপশন:
১. এই পানি ৩দিন বা ৭দিন দুইবেলা করে খেতে হবে। আর প্রতিদিন গোসলের পানিতে কিছু পানি মিশিয়ে গোসল করতে হবে। আর রুকইয়ার ওঁই পানি যদি শেষ হয়ে যায়, তাহলে আবার এক বোতল পানি নিয়ে শুদ্ধ করে কোরআন পড়তে পারে; এরকম কেউ আয়াতগুলো পড়ে ফুঁ দিলেই হবে। এজন্য প্রফেশনাল কারো দরকার নেই, তবে বরকতের জন্য কোনো মুরব্বি অথবা আলেমকে অনুরোধ করতে পারেন, সেটা ভিন্ন বিষয়। যার সমস্যা সে নিজে পড়তে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়।
২. দুই থেকে চার সপ্তাহ প্রতিদিন ২ ঘণ্টা করে রুকইয়া শুনতে হবে। আয়াতুল কুরসি'র রুকইয়া ১ঘন্টা সুরা ইখলাস, ফালাক্ব, নাস-এর রুকইয়া ১ঘন্টা। কোনো দিন খুব ব্যস্ত থাকলে আধাঘণ্টা করে হলেও শুনবেন। বাদ দিবেন না। (ডাউনলোড লিংক Download Here
৩. রুকইয়া ভালোভাবে কাজ করার জন্য নামাজ-কালাম ঠিকঠাক পড়তে হবে। ফরজ ইবাদাতে যেন ত্রুটি না হয়। (মেয়েদের পর্দা করা ফরজ)
৪. সকাল সন্ধ্যার মাসনুন দোয়া, এবং ৩ ক্বুল (সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস)এর আমল ঠিকঠাক করবেন। 
৫. ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমাবেন। আর তিনবার ৩ ক্বুল পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে নিবেন। 
.
রিমাইন্ডার: ৩-৭দিন রুকইয়ার পানি খেতে হবে এবং গোসল করতে হবে। আর ২ থেকে ৪ সপ্তাহ প্রতিদিন রুকইয়া শুনতে হবে। 
.
[ঘ]
মন্তব্য:
১। কয়দিন মেয়াদি রুকইয়া করবেন এটা প্রথমেই ঠিক করে নিন। অর্থাৎ ৩দিন না ৭দিন পানি খাবেন আর গোসল করবেন, কতদিন রুকইয়া শুনবেন ২ সপ্তাহ, ৩ সপ্তাহ নাকি ১মাস এগুলোও শুরুতেই ঠিক করে নিন। প্রতি সপ্তাহ শেষে যে আপনাকে সাপোর্ট দিচ্ছে তাঁরসাথে আপনার অবস্থা পর্যালোচনা করুন।
২। উপরের নিয়ম অনুযায়ী একবার ২সপ্তাহ বা একমাসের রুকইয়া শেষে আল্লাহ না করুক যদি বুঝেন সমস্যা এখনো যায়নি, তবে আবার শুরু থেকে রুকইয়া করবেন। অনেকে ওপর একাধিক যাদু করে, তখন একটা একটা করে চিকিৎসা করতে হবে।
৩। খেয়াল রাখবেন, বিয়ের জন্য রুকইয়া করতে গেলে অধিকাংশেরই প্রথম প্রথম বেশ কষ্ট হয়, কখনো সমস্যা বেড়ে যায়, তবে ধৈর্য ধরে চিকিৎসা করে যেতে হবে, ইনশাআল্লাহ আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।
৪. বেশীরভাগ ক্ষেত্রে প্রথম সপ্তাহেই উন্নতি টের পাওয়া যায়, তবে এরপরেও সপ্তাহখানেক আধঘণ্টা-একঘণ্টা করে হলেও রুকইয়া শুনে যাওয়া উচিৎ। তাহলে ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবে।
৫. আর যাদুর কারণে যদি শারীরিক কোনো সমস্যা তথা অসুখ-বিসুখ হয়, যা ভালো হচ্ছিলো না। এসবের জন্য রুকইয়ার পাশাপাশি ডাক্তারের চিকিৎসা করালে ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।